নস্টালজিয়া – ২

আমি তখন স্কুলেও ভর্তি হইনি, ভাসা ভাসা মনে পড়ে কিছু কিছু দিনের কথা। আমাকে খাওয়াতে খুবই বেগ পেতে হত বোনদের। আমাদের বাসায় কোন ফ্রিজ বা টিভি ছিল না সেই সময়। মাঝে মাঝে আমাদের অনুমতি মিলত পাশের বাসায় টিভি দেখার। আর টিভিতে কিছু চলার সময় সে কি ভিড় মানুষ জনের, যেন উপচিয়ে পড়ত ঘর। ওরা সবসময় টিভি দেখতে দিত না (কিংবা আমরা সবসময় যেতাম না, ঠিক মনে নাই) – তাই টিভি তেমন একটা আকর্ষনীয় বস্তু ছিল না আমার কাছে। আমি খেলতাম রাজ্যের যত প্যাকেট (বিস্কুট, সিগারেট) দিয়ে। সেই গুলো দিয়ে গাড়ি বানানো হত, মাটি দিয়ে চাকা। একবার অনেক গুলো শোলা পেয়েছিলাম কোথা থেকে যেন, সে কি আনন্দ আমার। শোলা পানিতে ভাসে, আর তাই গামলার সামনে থেকে আমাকে আর উঠানো যেত না।

বাসার পাশে ছিল ক্যান্সার গবেষনা ইন্সটিউটের মাঠ। আমি আর বাবা প্রায়ই বিকালে বের হয়ে যেতাম খেলতে। টোকাই আর ভাসমান ছেলেপুলেদের সাথে আমরা খুবই মজা করে ফুটবল খেলেছি অনেকদিন। আমি প্রায়ই দেখতাম একটা গাছের নিচ থেকে ওরা ফল কুড়ায়, দেখতে অনেকটা কামরাঙার মত। বাবাকে জিজ্ঞেস করায় বাবাও বলেছিল ওটা কামরাঙা। যেহেতু কামরাঙা মজার তাই একদিন আমি একটা ফল কুড়িয়ে কামড় দিয়ে দেখি ওয়াক থু, তেতো, চরম তেতো। আমি ভাবতাম ছেলেগুলো কেন এগুলো কুড়ায়। বড় হওয়ার পর জেনেছিলাম ওটা ছিল অর্জুন গাছ।

আমাকে ঐ সময়টায় দাঁত মাজার সময় কাউকে সাথে রাখতে হত। বেশির ভাগ সময় এই দায়িত্ব পেত স্বাতী অথবা শিমু, আমার ছোট আর সেজ বোন। হেহ হেহ, তার কারন হল আমি দাঁত মেজে পেস্টটা ফেলে দেয়ার বদলে প্রায়ই গিলে ফেলতাম। হো হো হো

আমাদের বাসার সামনে এক লোকের একটা ভক্সওয়াগন ছিল। আমরা বলতাম ব্যাঙগাড়ী। চকচকে সাদা একটা গাড়ী। মেজ বোন প্রায়ই বলত, ইস, আমাদের যদি এরকম একটা গাড়ী থাকত। প্রায়দিনই সকালে আমি আর স্বাতী তাকিয়ে দেখতাম গাড়ীটার বের হওয়া।