নস্টালজিয়া – ৩

সেই বাসা টা আমরা বদলিয়ে চলে আসি মাঠের পাশে আরেকটা বাসায়। ঘুপচি গলির মাঝে এক কোনায় ছিল আমাদের বাসা। এখানে আমি ছিলাম ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। সেটা পরের কাহিনী। এই বাসাটার সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

মাসে একবার শুক্রবারে আমি আর বাবা বের হতাম চুল কাটতে। সেইসময় নাপিত মামা পাঁচ টাকায় চুল কেটে দিত। আর এই চুল কাটার ব্যাপারটা আমার কাছে ছিল একটা অসহ্য ব্যাপার। বড়দের চেয়ারের দুই হাতলের উপরে কাঠের একটা তক্তা দিয়ে তার উপরে আমাকে বসানো হত। চুল কাটার সময় নাকে মুখে চুল ঢুকে যেত, উফ, আমার শুধু মনে হত চুল না বড় হলেই তো হয় – সবসময় চুল ছোট থাকলে কত ভাল হত।

আমাদের পাশের বাসায় টুটুল নামে একটা ছেলে থাকত। ঐসময় টুটলের কাজই ছিল আমাকে সারাদিন ক্ষ্যাপানো। বাসার পাশে একটা দোকানে সেইসময় চার আনায় অনেকগুলো টিকটিকির ডিম (ছোট গোল গোল লজেন্স) পাওয়া যেত, আর টুটুল করত কি সেগুলো কিনে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেত। এমন মেজাজ খারাপ হত আমার। টুটুলের সাথে আমার বনেনি কখনোই। টুটুলের মা ছিল অদ্ভুত এক মহিলা, সে টুটুলের উপরে ক্ষেপে গেলেই টুটুল কে একদম ন্যাংটো করে পিলারের সাথে বেঁধে রেখে দিত। টুটল যতই চিৎকার করে কাঁদুক না কেন, তাকে ছাড়া হত না। ব্যাপারটা সেই সময় আমার মনে অনেকদিন ধরে গেঁথে গিয়েছিল। টুটুলের গলা ফাটানো কান্না শুনলেই বোঝা যেত ওর মা ওকে এখন বেঁধে রাখছে। টুটলরা খুব শীঘ্রই বাসা বদল করে কোথায় যেন চলে যায়।

আগের বাসায় আমাদের একটা কুকুর ছিল টমি নামে। আমি আর বাবা প্রতিদিন সকালে ওকে খাওয়াতাম। বাসা বদল করে আসার পর কেন যেন কুকুরটা আমাদের সাথে আসেনি, যদিও মাঠের এপাশ আর ওপাশ। শুক্রবারে আমি আর বাবা প্রায়ই কিছু বাসি রুটি নিয়ে আগের পাড়ায় গিয়ে টমিকে খুজে বের করতাম। কিছুদিন পরে টমিও কোথায় যেন চলে গেল, আর পাইনি।

ছোটবেলা থেকেই অনেকগুলো বোনের সাথে থাকায় রান্নাবান্না আর পুতুল ছিল আমার খুবই পছন্দের একটা খেলা। আমরা বালি দিয়ে ভাত রান্না করতাম, ভুসি দিয়ে বানাতাম খাবার আর ইটের গুঁড়ো দিয়ে বানাতাম সরবত। । এমনকি পাশের বাসার নতুন ছেলেটা আর তার বোনের সাথেও আমি রান্নাবান্না খেলেছি অনেকদিন। একদিন কি কারনে যেন একটা টিনের জগে অনেকখানি আটার ভুসি নিয়ে পানি গুলে খাটের তলায় রেখে দিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম। কয়েকদিন পরে সেই ভুসি পচে গন্ধ বের হওয়া শুরু হল। ভালই মার খেয়েছিলাম সেদিন।