এইচএসবিসির এটিএম বুথ গুলোতে সবসময়ই একজন এক্সিকিউটিভ থাকেন। আমি ফোন ব্যাংকিং সার্ভিস সেটআপ করতে গেলাম কয়েকদিন আগে – দেখা গেল ফর্ম নেই, ভাল কথা – তা না থাকতেই পারে। আমাকে বলা হল পরের দিন খোঁজ নিতে – আমি আবার গেলাম পরের দিন। এবারও দেখা গেল ফর্ম নেই । এক্সিকিউটিভ যিনি ছিলেন তিনি একজন গার্ড কে ডেকে পাঠালেন ব্যাংক থেকে ফর্ম নিয়ে আসতে, আর আমাকে বলা হল মিনিট পনেরো মত বসে থাকতে। উনি ফোনেও ব্যাংকের কার সাথে যেন কথা বলে বললেন ফর্ম দিয়ে দিতে। মজার এবং একাধারে বিরক্তিকর ব্যপার ঘটল গার্ড যখন ফিরলম তখন, তার হাতে এক বান্ডিল ফোন ব্যাংকিং এর ফ্লেয়ার/লিফলেট – ফর্ম না। মেজাজ আমার তখন খুবই খারাপ, শালা সময়ের কি কোনই দাম নাই নাকি! পরপর দুদিন ঘুরলাম। আমাকে অনেক স্যরি টরি বলে বলা হল পরেরদিন আসতে – পরেরদিন গিয়ে অবশ্য ফর্ম পেলাম।
এর কয়েকদিন পরে ইন্সট্রাকশন আর পিন কোড সহ কাগজ পত্র হাতে পাবার পর আমি শুরু করলাম সার্ভিসটা সেটআপ করতে। কাগজপত্রে বলা আছে কিভাবে কি করতে হবে। ফোন করলাম, যান্ত্রিক কন্ঠ আমাকে বলল কি কি করতে হবে, সবই স্বয়ংক্রিয়। কিন্তু যখনই আমি আমার অ্যাকাউন্ট নাম্বার (ফোন ব্যাংকিং নাম্বার) ইনপুট করি ওপাশ থেকে আমাকে বলা হয় অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, আপনাকে আমাদের কাস্টোমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে ফরোয়ার্ড করা হচ্ছে। আরে আজিব! আমি বেশ কয়েকবার ট্রাই করলাম কিন্তু প্রত্যেকবার একই কথা। সেদিন বাদ দিয়ে ঠিক করলাম আগামীকাল ট্রাই করব আবার।
পরেরদিনও একই ব্যপার – আজিব, আমি ঠিক করলাম ঠিক আছে তাহলে কথা বলা যাক – ওমা – ফরোয়ার্ড করতে যতক্ষন লাগে ততক্ষন আমাকে বেশ কয়েকটা অ্যাড শুনতে হল, প্রোডাক্ট প্রোমোশনাল
ওপাশ থেকে কেউ একজন (ছেলে) ধরে বলল “গুড আফটারনুন স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি” আমি তাকে বললাম যে আমার ফোন ব্যাংকিং সার্ভিসটা সেটআপ করা দরকার। এইবার সে আমাকে বলল “অনুগ্রহ করে আপনি আমাদের কল সেন্টারের সাথে কথা বলুন”। মেজাজ আমার আবার খারাপ, যদি আমাকে কল সেন্টারেই কথা বলা লাগবে তাহলে কাস্টোমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে ফরোয়ার্ড করা হল কেন? – আমি তাকে বললাম যে “ভাল কথা ব্রাদার, আমাকে কল সেন্টারের নাম্বারটা দিন”
এবার শুরু হল কলসেন্টারে কল করার পালা। সবগুলো নাম্বার বিজি, কোনো অটো হান্টিং সিস্টেম নেই। কিছুক্ষন পর পর আমি ট্রাই করেই যাচ্ছি। তো বেশ কিছুক্ষন পরে কপালগুনে কল ঢুকল – এইবার শুরু হল ইন্টারেসটিং পর্যায়। কোন এক তরুনী কল ধরে বলল “গুড আফটারনুন, দিস ইজ অমুক-তমুক ফ্রম এইচএসবিসি, হাউ মে আই হেল্প ইউ?”
আমি: আমার ফোনব্যাংকিং সার্ভিস টা সেটআপ করা লাগবে, সো কাইন্ডলি আমাকে অ্যাসিস্ট করুন কিভাবে কি করব
তরুনী: স্যরি স্যার?
আমি: ফোন ব্যাংকিং সার্ভিস টা সেটআপ করা লাগবে
তরূনী: ফোন ব্যাংকিং সার্ভিস?
আমি (আমার তখন মেজাজ খারাপ): আই’ভ গট অল দ্য নেসেসারি পেপারস অ্যান্ড ট্রাইং টু ইনিশিয়েট ফোন ব্যাংকিং সার্ভিস, আর ইউ ক্লিয়ার অর নট?
তরুনী: জি স্যার, আপনি কি ফোন ব্যাংকিং সার্ভিস নাম্বারে কল করেছেন?
আমি: হ্যা করেছি, সবগুলো ইন্সট্রাকশন ফলো করেছি ঠিক মত কিন্তু যখনই ফোন ব্যাংকিং নম্বর চাচ্ছে, ইনপুট দেয়ার পর আমাকে কাস্টোমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে ফরোয়ার্ড করে দেয়া হচ্ছে।
তরূনী: ওকে স্যার, আপনি কি আপনার ফোন ব্যাংকিং নাম্বার টা সঠিক ভাবে ইনপুট করেছেন?
আমি: হ্যাঁ, প্রথম নয়টা ডিজিট এবং শেষে এক। শুন্য শুন্য বাদ দিয়ে।
তরুনী: কারেক্ট স্যার, আপনি কি যখন আপনার কাছ থেকে নাম্বারটি চাওয়া হচ্ছে তখন ইনপুট করেছেন নাকি আগে?
আমি: পরে
তরূনী: ওকে স্যার আমি দেখছি
আমি: আপনি কাইন্ডলি আমাকে দেখে একটু জানান কি প্রবলেম
কিছুক্ষন পর: স্যার আমি দেখছি, তবে আপনি আজকে আর ট্রাই না করে আগামীকাল একবার ট্রাই করুন।
আমি: আমি অলরেডী গতকাল ট্রাই করেছি, আজকে আবার করলাম, কিন্তু সেম রেজাল্ট।
তরুনী: স্যার আপনার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত আর কোনো কোয়েরী আছে?
আমি: স্যরি?
তরুনী: আপনার যদি অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত আর কোনো কোয়েরী থাকে তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি
আমি: কাইন্ডলি আপনি আমার এই প্রবলেমটি আগে সলভ করুন
তরুনী: জি স্যার আমি দেখছি, আপনার ফোন নাম্বার টা দেবেন প্লিজ, এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার – আমি কিছুক্ষন পরে আপনাকে কল করে আপডেট দিচ্ছি
আমি তখন আমার নাম্বার দিলাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও দিলাম
তরুনী: আপনার নামটা স্যার?
আমি: হাসিন হায়দার
কল শেষ, এর পরে অনেক্ষন ওয়েট করলাম কলের জন্য – কল আর আসলো না। ঘোড়ার ডিমের কল! ঘোড়ার ডিমের সার্ভিস, ঘোড়ার ডিমের কাস্টোমার কেয়ার। যত্তসব স্টুপিড গুলারে বসায় রাখে কল সেন্টারে!
মেজাজ আমার এখন খুবই খারাপ – বসে বসে মুড়ি খাওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই!