পিএইচপি এক্সপার্টস সেমিনার ২০১০ এবং আড়ালের কিছু কথা

গত নভেম্বর ছয় তারিখে আমরা সবাই মিলে আয়োজন করেছিলাম পিএইচপি এক্সপার্টস সেমিনার ২০১০ । বরাবরের মত এবারও প্রচুর উৎসাহ নিয়ে শুরু করা হয়েছিল সবকিছু, এবং সবমিলিয়ে শেষ ও হয়েছে মাশাল্লাহ যথেষ্ট ভাল ভাবেই। কিছু ভুল ত্রুটি তো থাকেই, সেগুলো সবসময়ই থাকে তাই আর আলাদা ভাবে উল্লেখ করলাম না। ধন্যবাদ অংশগ্রহনকারী সবাইকে, স্পিকারদের সবাইকে এবং অবশ্যই ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার ক্লাবের ভলান্টিয়ারদের। আর স্পেশাল ধন্যবাদ ব্র‍্যাকে ইউনিভার্সিটির প্রভাষক আন্নাজিয়াত আলিম রাসেল এবং ক্লাবের ইফতেখাইরুল ইসলাম রেইন কে, ভয়াবহ রকমের দৌড়াদৌড়ি করার জন্য!

কিভাবে শুরু হলে এবারের সবকিছু? তনু ভাই ডুুয়েট এ সেমিনারটি আয়োজন করার পর থেকেই আমি বলা যায় ফুল গীয়ারে দৌড়োচ্ছিলাম। মনে হল এখনই করার জন্য একদম পারফেক্ট সময়। সাহস করে ডাকলাম কাছের কয়েকজন কে। ইমরান, আরাফাত, রাজু, অমি আজাদ, তনু এবং হাসান এর সাথে কথা বলে মনে হল ঘোষনা দিয়ে দেয়াই ভাল। হাতে কিছু সময় রাখা দরকার, সবকিছু ভালভাবে অ্যারেঞ্জ করার জন্য। আমরা অক্টোবরের ৮ তারিখে সবাইকে জানালাম যে নভেম্বরের ৬ অথবা ১৩ তারিখে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। পরে সবার আপত্তির মুখে ১৩ তারিখ বাদ হয়ে গেল। মোবারক ভাইকে ধন্যবাদ ১৬/১৭ তারিখে ঈদের ব্যপারটা সামনে নিয়ে আসার জন্য। আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

১০ তারিখে আমরা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম সবার জন্য ওপেন করে দেই। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বোঝা যায় না কতজন আসতে পারে। তাই এই ব্যপারটা একরকম অাবশ্যক। এর পরে কাজ ছিল স্পনসর এবং স্পিকার ম্যানেজ করা। গ্রুপের ব্যাপক পরিচিতি এবং আমাদের ক্লোজ নেটওয়ার্কে কিছু অসাধারন ডেভেলপার বন্ধুদের কারনে স্পিকার ম্যানেজ করা হয়ে গেল তিন দিনে। সবচেয়ে মজা হয়েছে স্পনসর ম্যানেজ করার সময়ে। অ্যানাউন্সমেন্টের প্রথম দিনে আমাদেরকে কনফার্ম করেছে ৬ জন স্পনসর এবং পরদিন আরো দুইজন। আমাদের টার্গেট বাজেট ছিল এক লাখের মত। যেহেতু ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ক্লাব স্পেস এবং লজিস্টিকস স্পনসর করেছে সেহেতু এর বেশীর প্রয়োজন ছিল না। পরে আমরা আরো দুই বা তিনজন আগ্রহী স্পনসরকে না বলতে বাধ্য হয়েছিলাম।

স্পিকার এবং স্পনসর ম্যানেজ হয়ে যাওয়ার পরে যেটা দরকার সেটা হলে এক্সিকিউশন কিভাবে হবে তার একটা খসড়া প্ল্যান। সম্ভবত ১৬ তারিখে আমি, নুরুল ফেরদৌস, এমরান, ত্রিভুজ এবং আরাফাত মিলে একটা মিটিং করলাম বুমারস এ, লাঞ্চ করতে করতে। আরেকজন কেউ ছিল, এই মুহুর্তে মনে নাই। প্ল্যান অনুযায়ী এমরান রিহার্সাল এর ডেট ঠিক করা হল নভেম্বরের তিন তারিখে। আঠারো জন স্পিকার, স্পনসর টাইম আর হাতে মাত্র ৬ ঘন্টা – প্ল্যান অনুযায়ী না চললে একদম মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম। রিহার্সাল এর জায়গা ঠিক করা ছিল আমার বাসা অথবা এমরানের অফিস। প্ল্যান হল আমরা সবাইকে স্ন্যাক্স, পানি, জুস দেব খাবার হিসেবে, একটা ট্র‍্যাশ ব্যাগ দেয়া হবে উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য (এখানে সেখানে ময়লা ফেলা আমার কাছে প্রচন্ড রকম অসহ্য একটা ব্যাপার, আমার একদম মাথায় রক্ত উঠে যায় এখানে সেখানে ময়লা ফেলা দেখলে)

এবার ঘটল সবচেয়ে মজার ব্যপার। অক্টোবরে বিশ (মাত্র দশ দিনে) তারিখের মাঝে ৫৩৫ জন রেজিস্ট্রেশন করে ফেলল। ডুপ্লিকেট/স্পিকার চেক করে দেখা গেল প্রায় ৫২১ জন। আমরা সর্ব সাকুল্্যে ৩০০ জনের জন্য ব্যবস্থা করতে পারব। তাই রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়া হলে বিশ তারিখ রাত বারোটায়। এবার সব কিছু আয়োজন করার পালা।

আরাফাত দায়িত্ব নিল যতরকমের প্রিন্টিং আছে তার। এই মানুষটাকে আমি প্রচন্ড রকম পছন্দ করি তার লাগামহীন এনার্জি এবং উৎসাহের জন্য। খাবারের দায়িত্বে ছিল এমরান এবং রেইন, একদম পারফেক্ট জুটি। স্পিকারদের জন্য কিছু জিনিষ ম্যানেজ করার দায়িত্বে ছিল ত্রিভুজ। আর আমরা ঠিক করেছিলাম কিছু পেনড্রাইভ কুইজের পুরষ্কার হিসেবে দেয়ার জন্য, সেগুলো কেনার জন্য ছিল নুরুল ফেরদৌস।

এর মাঝে রেইন কেমন করে যেন রিহার্র্সালের জন্য ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুম ম্যানেজ করে ফেলল। এই অত্যুৎসাহী ছেলেটাকে আমার বড়ই পছন্দ। একটা দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে একদম নিশ্চিন্ত থাকা যায়। এর মাঝে আমি রাসেল ভাই আর রেইন নিয়ে মিটিং করে ফেললাম ব্র‍্যাক ইউনির সব কিছু সেটআপ করতে হবে সেটা নিয়ে। ট্রিপার্টের হাসান মাহমুদ ব্যানার ডিজাইন করতে চাইলেন নিজের উৎসাহে। চমৎকার এই মানুষটির এবং তাঁর বন্ধু মৃনাল ভাইয়ের সাহায্য না পেলে প্যাড, ব্যানার কিছুই হত না সময়মত। দুজকে রাতদিন খেটে আমাদের জন্য ব্যানার এবং ফেস্টুন তৈরি করে দিলেন। এক তারিখে রাত দশটায় মৃনাল ভাইয়ের কাছ থেকে ব্যানার নিয়ে আসলাম। আরাফাত সেই ব্যানার নিয়ে প্রেসে গেলেন দুই তারিখে সকাল দশটায়। এর মাঝে একটা মজার আইডিয়া পাওয়া গেল আরাফাতের কাছ থেকে, ভলান্টিয়ার এবং স্পিকারদেরকে কিছু মগ গিফট হিসেবে দেয়ার। সেই দায়িত্বও হাসিমুখে নিজের কাঁধে নিলেন আরাফাত। পরে কাটাবন এলিফ্যান্ট রোড খুজে শাহ পরান আর আরাফাত মিলে মগ কিনে প্রিন্ট করতে দিয়ে আসলেন। সে কি বিপুল উতসাহ তাঁদের মাঝে।

এর মাঝে একটা মজার ব্যাপার হল। তনু আর তাঁর বন্ধু জাকির হোসেন মিলে একটা চমৎকার (পুরা ফাটাফাটি) একটা প্রোমো ভিডিও ডিজাইন করে ফেললেন! জটিল মজা হল একরকম!

দুই তারিখে মাসনুন ঢাকায় আসল রিহার্সেলে অংশ নেয়ার জন্য। আমার বাসায় রাত তিনটা পর্যন্ত ত্রিভুজ আমি আর মাসনুন মিলে স্লাইড বানালাম। কেমন যেন ঈদ ঈদ ভাব ছিল একরকম। বিআইটি থেকে পাশ করার পর এমন মজার দিন পার করলাম সবাই মিলে। আমি এর মাঝে ১৪ জন স্পিকারকে মেইল দিলাম যে তাঁদের স্লাইড গুলো কেমন হবে সেটা নিয়ে। পরদিন সকালে এগারোটার সময় ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুমে ভীষন মজার মাঝে হয়ে গেল রিহার্সাল। কার স্লাইডে কি ভুল আছে সেটা নিয়ে অন্যরা সবাই কমেন্ট করল। কেমন হলে ভাল হয়, কি বাদ দিলে ভাল লাগবে, বা কি যোগ করলে আরো সুন্দর হয় সেটা নিয়ে সবাই সবাইকে হেল্প করলাম। কারন এই প্রোগ্রামটি যে হতেই হবে খুব ভাল। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই সিনার্জিটা ।

রিহার্সাল থেকে ফিরে পরদিন একটা ভাল খবর জানাল লাভলু এবং ত্রিভুজ। দুজন মিলে কম্পিউটার জগৎ এবং পিসি ওয়ার্ল্ড কে ম্যানেজ করে ফেলল। পিসি ওয়ার্ল্ড রাজি হল ৪০০ কপি ম্যাগাজিন সবাইকে দিতে, আর কম্পিউটার জগত রাজি হল লাইভ স্ট্রিমিং করতে। জটিল রকম মজা পেলাম সবাই। আমি এর মাঝে মেইল দিলাম জেন্ড, ন্যু-স্ফিয়ার, ফিউশনচার্টস এবং জেটব্রেইনস কে। তারাও রাজি হয়ে গেল অংশগ্রহনকারীদের জন্য তাদের প্রোডাক্ট স্পনসর করতে। খুব ভাল লেগেছে এই ব্যপারটাও।

এর মাঝে দুই তারিখেই এমরান আর রেইন মিলে খাবারের সবকিছু কনফার্ম করে এসেছে। পাঁচ তারিখে আমি আইডি কার্ডের ডিজাইন করে ফেললাম – সেটা নিয়ে রাজু (হাঙ্গরিকোডার) দৌড়ল প্রিন্ট করতে, লেমিনেট করতে আর গলায় ঝোলানোর ফিতা কিনতে। শেষমুহুর্তে এই দৌড় টা না দিলে আিদি কার্ড হত না কারো।

পাঁচ তারিখে রাজু, মাসনুন আর ত্রিভুজ মিলে স্লাইড ফাইনালাইজ করছিলাম এমন সময় রাত সাড়ে এগারোটায় আরাফাত,শাহ পরান এবং শাফিউল ভাই মিলে বাসায় মগ আর কলম গুলো দিয়ে গেলেন। তাঁরপরেই দৌড় দিলেন আবার অনেক দুরে তাঁদের বাসায়।

সবশেষে চলে আসলে সেই দিন – সকাল থেকে শুরু হলে সবার ব্র‍্যাক ইউনির দিকে দৌড়াদৌড়ি। আমি একটার দিকে অমি আর মাসনুন কে নিয়ে ড্রাইভ করে চলে আসলাম। এসে দেখি ভলান্টিয়ার দের নিয়ে রাসেল আর রেইন দুপুরের লাঞ্চ করছেন। আমরা সবাইকে একটা ব্রিফ দিলাম কিভাবে কি করতে হবে – এর মাঝে সবাই আসা শুরু করল এক এক করে – এর পরে কি হল, সেটা নিয়ে আরেকটা পোস্ট লিখব কালকে

একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি – অনেক অনেক কৃতজ্ঞ এবার আমি সবার কাছে। সবাই মিলে এভাবে না দৌড়াদৌড়ি করলে কিছুই হত না – অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে, অনেক অনেক, শেষ করা যাবে না এত! ব্যানার ডিজাইনার হাসান ভাইকে স্পেশাল ধন্যবাদ ওনার শ্বশুরের অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও সময়মত ব্যানার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য (এই ব্যাপারে মৃনাল ভাইকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ)

🙂 ভাল থাকবেন সবাই, অনেক ভাল।