নস্টালজিয়া – ১

ক্লাস ওয়ানে আমাকে ভর্তি করা হবে। বাবা আমাকে নিয়ে চললেন টি.অ্যান্ড.টি সরকারী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে (Ahem) – বালিকা বিদ্যালয় হলেও আসলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছেলেদের পড়তে দিত। বাসার পাশে হওয়ায় আর আমার আরো দুটো বোন একই স্কুলে পড়ায় এটাই হল আমার জন্য উপযুক্ত জায়গা, মা বাবা আর বোনেরা ঠিক করেছে।

আমাকে অনেকবার করে নামতা মুখস্ত বলতে হল মার কাছে রওনা দেবার আগে। আরো কি কি যেন বলতে হয়েছিল। স্কুলে ম্যাডাম এর রুমে আমাকে একা একা ঢুকায় দিয়ে বাবা বাইরে বসে আছে। ম্যাডাম একবার জিজ্ঞেস করেন নামতা বলতে, একবার এবিসিডি বলতে। তখন তো আর প্লে, কেজি এগুলা ছিল না, অন্তত আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্য পরিবারের জন্য। সরকারী স্কুলে ক্লাস ওয়ানে বোধহয় এগুলোই জিজ্ঞেস করত। আমি ভয়ে ভয়ে কাদোঁ কাদোঁ মুখে সব বললাম। ম্যাডাম কিছুক্ষন পরে বাবাকে ডেকে কি যেন বললেন।

বাসায় ফিরতে ফিরতে বাবা জানালো যে আমার ভর্তি হয়ে গেছে, তবে ক্লাস ওয়ানে না, টুতে। আমার মত ধেড়ে বাচ্চার নাকি ক্লাস ওয়ানে পড়া ঠিক হবে না। রোল দিয়েছে ১২০। আমি তো মহা খুশি, ১২০ – কেন যে ১২০০ হল না। বাসায় এসে দেখি মা মাছ কাটছে, মাকে বললাম – জান মা, আমার রোল না ১২০। মা তখন বুঝিয়ে দিল যে রোল যত কম হয় ততই ভাল।

পরেরদিন থেকে ক্লাস, মহা টেনশনে ছিলাম আমি । বাসায় আমার বোনেরা সারাক্ষন আমাকে বাসায় আটকায় রাখত, বাইরে যেতে চাইলে ভয় দেখাত ছেলেধরার। এই বুঝি ছেলেধরা নিয়ে যাবে, এই ভয়ে আমি তটস্থ থাকতাম। পরের দিন স্কুলে গেলে কি হবে, ক্লাসে তো আমার বোনরা থাকবে না, যদি ছেলেধরা ধরে নিয়ে যায় এই চিন্তায় আমি তখন ব্যাস্ত।