উত্তরা বিআরটিএ থেকে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপের ডেট বাড়ানো, ডিজিটাল নাম্বার প্লেট তোলা, ফিংগার প্রিন্ট দেয়া এবং স্মার্ট কার্ড তোলার ডিটেইলস
১. রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপের ডেট বাড়াতে হলে: স্লিপ নিয়ে সোজা চলে যান ১০৩ নম্বর রুমে, সেখানে কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকা লোকটিকে কাগজপত্র দিন এবং বলুন যে আপনি স্লিপের ডেট বাড়াতে চান। তিনি আপনার কাগজের ডিটেইলস দেখে ডেট বাড়িয়ে একটা সীল মেরে দেবে। এর মাঝে যদি আপনার ডিজিটাল নাম্বার প্লেট রেডি হয়ে যায়, তাহলে আর ডেট বাড়াবে না।
যা যা নিয়ে যাওয়া লাগবে: রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এবং এনআইডির ফটোকপি। সাথে অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এবং এনআইডি রাখা লাগবে। অরিজিনাল কাগজ সাথে না রাখলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে
কতক্ষন লাগে: পাঁচ ছয় জনের লাইন থাকে, দশ/বিশ মিনিটের বেশি লাগে না
২. ডিজিটাল নাম্বার প্লেট (ডিএনপি) লাগাতে হলে: আপনার কাছে এসএমএস আসলে, বা বেশ অনেকদিন হয়ে গেলে, বা ১০৩ নম্বর রুম থেকে কোন তথ্য পেলে (যে আপনার ডিএনপি রেডী) বাইক নিয়ে সোজা চলে যান উত্তরা বিআরটিএর সামনে। ওখানে মোটরসাইকেলের পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড আছে, সেখানে পার্ক করে রাখুন। কিছুক্ষন পর পর বিআরটিএর ইন্সপেক্টর এসে চেক করে পার্ক করে রাখা বাইকগুলো। আপনার বাইকের কাছে আসলে রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপের ফটোকপি ওনাকে দিন। এবার আর কোন কাজ নেই বসে থাকা ছাড়া। আধা ঘন্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। একসময় একজন লোক পার্কিং এর জায়গায় অনেকগুলো নাম্বার প্লেট নিয়ে আসবে এবং নাম্বার ধরে ধরে জোরে ডাক দিবে। আপনার নাম্বার ধরে ডাকলে আপনি আপনার ডিজিটাল নাম্বার প্লেট এবং স্ক্রু (২ টা) তার কাছ থেকে নিয়ে নিন। তাকে দিয়ে লাগানোর কোন দরকার নাই, অপেক্ষা করুন। চলে যাবেন না এখনই
একটু পর আবার সেই ইন্সপেক্টর আসবে ছবি তোলার জন্য। আপনার বাইকের কাছে এসে আপনার নাম্বার প্লেট স্ক্যান করে আপনাকে বাইকের পাশে দাঁড়াতে বলবে, এবং বাইক সহ আপনার ছবি তুলবে। ব্যাস, কাজ শেষ। আপনি নাম্বার প্লেট এদেরকে দিয়েও লাগাতে পারেন, নিজে পরিচিত গ্যারেজে গিয়েও লাগাতে পারেন। আমি সাজেস্ট করব গ্যারেজে নিয়ে যেতে। সেখানে ১৫০ টাকা দিয়ে একটা নাম্বার প্লেট হোল্ডার (স্টিলের শক্ত প্লেট, যাতে কারো সাথে বাড়ি খেলেও নাম্বার প্লেট খুলে না পড়ে যায়) কিনে আপনার বাইকের সাথে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট গ্যারেজের লোক দিয়েই লাগিয়ে নিন।
যা যা নিয়ে যাওয়া লাগবে: রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর ফটোকপি। সাথে অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ রাখা লাগবে। অরিজিনাল কাগজ সাথে না রাখলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে। মাঝে মাঝে ডিএনপির পেমেন্ট এর রশিদও দেখতে চায়, সুতরাং সাথে রাখা ভালো
কখন গেলে ভালো হয়: প্রসেস শুরু হয় নয়টা, সাড়ে নয়টা থেকে। অনেকে হুদাই সকাল সকাল কিংবা সাতটা আটটার দিকে দাঁড়িয়ে থাকে। কোন দরকার নাই। সাড়ে এগারোটার মাঝে যেকোন সময় যান। এর পরে গেলে নামাজ এবং লাঞ্চ ব্রেকে পড়ে যাবেন, অহেতুক এক/দেড় ঘন্টা বেশী সময় লাগবে।
৩. ডিজিটাল স্মার্ট কার্ডের জন্য ফিংগারপ্রিন্ট দিতে হলে: আগে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগাতে হবে, বা অ্যাটলিস্ট ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের এসএমএস আসা লাগবে। এই দুটোর কোন একটা হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এবং এনআইডির ফটোকপি নিয়ে সোজা চলে যান ১০৩ নম্বর রুমে। সেখানে কম্পিউটারে বসে থাকা একজন লোক আপনার স্লিপ দেখে সেখানে রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর ফটোকপির উপরে আপনার সিরিয়াল নম্বর লিখে দিবে, যেমন ২২ বা ২৩ বা এরকম কিছু। এবার সেটা এবং অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ নিয়ে ১০২ নম্বর রুমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। ওখানে দুইটা লাইন একসাথে, একটা স্মার্ট কার্ড বিতরনের লাইন, আরেকটা ফিংগার প্রিন্টের লাইন। সুতরাং বুদ্ধি করে দাঁড়ান। আপনার সিরিয়াল আসলে কম্পিউটার নিয়ে বসা লোকটার সামনে বসে পড়ুন এবং তাকে রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর সিরিয়াল লেখা ফটোকপি, এনআইডির ফটোকপি এবং রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর অরিজিনাল কপি দিন। উনি আপনার ফিংগার প্রিন্ট নিবে এবং সাইন করতে বলবে। সাইন টা মনে রাখবেন, পরবর্তীতে বাইক সেল করতে হলে (মালিকানা ট্রান্সফার করতে হলে) এই সাইন মিলতে হবে, নাহলে অনেক ভেজাল। সাইন করা হয়ে গেলে এই লোক আপনার ফটোকপিগুলো রেখে দিবে এবং অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর উপরে ডেট বাড়িয়ে একটা সীল মেরে দিবে। ব্যাস, আপনার কাজ শেষ, এখন যেতে পারেন 🙂
কতক্ষন লাগে: পাঁচ ছয় জনের লাইন থাকে, আধা ঘন্টার বেশি লাগে না
৪. ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড তুলতে হলে: যখন আপনি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড রেডী হয়ে গেছে টাইপের এসএমএস পাবেন, তখন রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ এর অরিজিনাল কপি এবং একটা ফটোকপি নিয়ে চলে যান সেই আগের ১০৩ নম্বর রুমে কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকা লোকটার সামনে। তাকে অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ টা দিন, উনি আপনার স্মার্ট কার্ডের বক্সের নাম্বার লিখে একটা সাইন/সীল মেরে দিবে। এবার সেই কপি নিয়ে নিয়ে ১০২ নম্বর রুমের বামপাশে গ্রীলের সামনে লাইনে দাঁড়ান। আপনার সিরিয়াল আসলে ভেতরের লোকটাকে আপনার অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ টা দিন। সেই লোক বক্স থেকে আপনার স্মার্ট কার্ড বের করে ১০২ নম্বর রুমে বসে থাকা আরেকজন লোকের কাছে দিবে। ঐ যে মনে আছে, যেই লোকটা আপনার ফিংগারপ্রিন্ট নিয়েছিল, সেই লোকের কাছে। এবার সেই লোকের সামনে লাইনে দাঁড়ান। সেই লোক কিছুক্ষন পরে আপনার বাইকের নম্বর ধরে জোরে ডাক দিবে। তখন সেই লোকের কাছে যান, সেই লোকটা আপনার স্মার্ট কার্ডের বারকোড স্ক্যান করে আপনাকে ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড টা দিয়ে দিবে এবং আপনার অরিজিনাল রেজিস্ট্রেশন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ টা রেখে দিবে। কংগ্র্যাচুলেশনস, বাইক নিয়ে আপনার যাবতীয় আজাব আপাতত শেষ
কতক্ষন লাগে: দশ বারোজনের জনের লাইন থাকে, আধা ঘন্টার বেশি লাগে না
নোট: উত্তরা বিআরটিএ তে লাঞ্চ এবং নামাজের ব্রেক একটা থেকে দুটা, সুতরাং এই সময়টা অ্যাভয়েড করবেন।
এই আর্টিকেলটা ভালো লাগলে জানাবেন। শেয়ার করবেন যাতে অন্যরাও পুরো সিস্টেমটা জানতে পারে এবং অহেতুক ভোগান্তি/সময়-নষ্ট/ঘোরাঘুরি/টাকা-পয়সা-নষ্টের শিকার না হয় 🙂